ইসলামে গাছগাছালির গুরুত্ব
বাংলাদেশে এ সময়টা বৃক্ষরোপনের উপযুক্ত সময়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে গাছগাছালি লাগানোর একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শুধু গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন অঞ্চলে জোরদার হয়েছে গাছগাছালির ব্যবসা। মানুষ মুলত সামাজিক তাগিদ থেকেই গাছ লাগিয়ে থাকেন। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না আমাদের ধর্মেও বৃক্ষরোপনের প্রয়োজনীয়তাকে অনেক জোর দেয়া হয়েছে। অন্যান্য ধর্মেও তাই।
হাদিস শরিফে বলা আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করল, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর বিনিময়ে তাকে এই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিফল দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)। তাই আমাদের বেশি করে বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন করা উচিত।
আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) নিজে গাছ লাগিয়েছেন, সাহাবাদেরও গাছ লাগানো এবং বাগান করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) গাছ লাগানোকে সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষ, পাখি বা পশু যখন তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন তা তার (রোপণকারী) পক্ষে একটি সদকা (দান) হিসেবে পরিগণিত হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
বন ও বন্য পশুপাখিকে আল্লাহর নেয়ামত উল্লেখ করে রসুল (সা.) মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারার বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছিলেন। জানা যায় ওই এলাকায় গাছপালা কাটা এবং সেখানে পশুপাখি শিকার করা আজও নিষিদ্ধ।
পবিত্র কোরান শরিফে বৃক্ষলতা সম্পর্কে উল্লেখ আছে, ‘তিনি আসমান থেকে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর আমি তদ্দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদের অঙ্কুর উদ্গম করি, অনন্তর তা থেকে সবুজ পত্র উদ্গত করি, তারপর তা থেকে ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খর্জূরবৃক্ষে মাথি থেকে ঝুলন্ত কাঁদি বের করি আর আঙুর, জলপাই-জইতুন ও ডালিমের বাগান সৃষ্টি করি। এগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। লক্ষ করো এর ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং এর পরিপক্বতাপ্রাপ্তির প্রতিও লক্ষ করো। অবশ্যই বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ৯৯)। ‘তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাকো। তিনি তোমাদের জন্য তা দিয়ে জন্মান শস্য, জইতুন, খেজুরগাছ, আঙুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ১০-১১।
পানি ও উদ্ভিদ জীবনচক্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এ ব্যাপারে কোরানে বলা হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে, অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা পৌঁছান, তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪৮)।
বৃক্ষরাজি থেকে প্রাপ্ত খাদ্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিচূর্ণ করি এবং আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জইতুন, খেজুর এবং বহু বৃক্ষবিশিষ্ট উদ্যান, ফল ও গবাদিপশুর খাদ্য, এটা তোমাদের এবং তোমাদের পশুগুলোর জীবনধারণের জন্য।’ (সুরা-৮০ আবাসা, আয়াত: ২৪-৩২)। ‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদ্গত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদিপশু এবং তারা নিজেরা আহার করে। তারা কি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হবে না?’ (সুরা-৩২ সেজদা, আয়াত: ২৭)।
(বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এবং আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম এর সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী লিখিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত।)