হারিয়ে যাচ্ছে ভেষজ গাছগাছালি
এই প্রজন্মের কাছে আর তেমন পরিচিত নয় একসময়ের ভেষজ গাছগাছালিগুলো। তাই সবার অলক্ষ্যে যেন সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।
ঔষধি গুনে ভরা তুলসি, কালমেঘ, ঘৃতকুমারি, তেলাকুচো, পলতা, আকন্দ, বৈচি, থানকুনি, কুলেখাড়া, ব্রাহ্মি, কলমি, হ্যালেঞ্চার মতো কতশত নাম জানা, না জানা গুল্ম, বৃক্ষ, শাক গ্রামবাংলার পথঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো সেসময়। জ্বরে নিসিন্দা পাতা, সর্দি কাশিতে বাসক, তুলসিপাতা। রক্তাল্পতায় কুলেখাড়া, বুদ্ধি বিকাশে ব্রাহ্মি, অনিদ্রায় শুষনিশাকের ব্যবহার ছিল পরিচিত ঘটনা। কৃমির জন্য সাত সকালে কাঁচা কালমেঘ পাতা, আনারস পাতার রস তো মহৌষধ বলে মনে করা হয় এখনও। পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা, গাঁদাল পাতা ব্যবহারে ভালোফল মেলে। কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে বন তুলসি, পাথর কুচি, গাঁদা বা কচার আঠা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেওয়া হতো একসময়।
দুই তিন দশক আগেও সাত সকালে নিম, কচা বা বাড়ির পাশে ঝোপ হয়ে থাকা আশশেওড়ার ডাল দিয়েই দাঁত মাজতেন গ্রামবাংলার মানুষ। ভ্যারান্ডা, জীবলি বা পলতা মাদার গাছের ডাল দিয়ে বাড়ির বেড়া দেওয়া তো খুব সাধারণ ব্যপার ছিল একটা সময়। চৈত্র মাসে টানের সময়ে সেই ডাল পুঁতলে তার থেকে সহজেই শিকড় বেরিয়ে গাছ হয়ে যেত। এখন তো জীবলি বা পলতা মাদার গাছ প্রায় চোখেই পড়ে না। জংলি গাছগুলোর মধ্যে দাদমর্দন, পলতা মাদার (পারিজাত), কেওকন্দর মতো বেশ কিছু গাছের ফুল এত সুন্দর দেখতে যে, তাদের বাহারি গাছ হিসেবেও বাড়িতে লাগানো যেতেই পারে। চাকুন্দা, দাদমর্দন গাছের রস চর্মরোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার রেওয়াজ আছে। এমনকি, গায়ে লাগলেই গা চুলকায় যে বিছুটি গাছকে আমরা এড়িয়ে চলি সেই গাছও চর্মরোগ, প্রস্রাবের সমস্যা, মাথাব্যথা, হাঁপানিতে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আগে রাস্তার ধারে প্রচুর হাতিশুঁড় গাছ দেখা যেত, যা চোখের সমস্যায় ও গাঁটের ব্যথায় ব্যবহার হত। গ্রামগঞ্জের রাস্তার ধারে ধারে হলুদ ফুলের কাল কাসুন্দার ঝোপ আজও চোখে পড়ে। যা কাশি, রক্তের দোষে ব্যবহার করা হয়। আগে তো বাড়িতে বেড়া দেওয়ার জন্য মেহেন্দি গাছেরও খুব কদর ছিল। মেহেন্দি পাতা বেটে মহিলারা হাতে মেহেন্দি করতেন, তেমনই আবার চুল কালো করতে হাতের নাগালে পাওয়া কেশুত গাছের পাতারও যথেষ্ট ব্যবহার ছিল। চোখের সামনে আগাছার মতো বেড়ে ওঠা এই গাছগুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশবিদদের মতে এর কারণ ক্রমশ বেড়ে ওঠা নগর সভ্যতা, গাছগুলোকে আগাছা হিসাবে গণ্য করে তাদের ধ্বংস করা, বর্তমান প্রজন্মের তার চারপাশের প্রকৃতির প্রতি উদাসীনতা।
একজন বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন খুব সহজেই কালমেঘ (Andrographis paniculata), বাসক (Justicia adhatoda), শুষনি (Marsilea quadrifolia), পাথরকুচি (Bryophyllum pinnatum), গাঁদাল (Paederia foetida), তুলসী (Ocimum Sp), থানকুনি (Centella asiatica)-র মতো খুব প্রয়োজনীয় কয়েকটি গাছ বাড়ির টবে লাগিয়ে রাখা ভাল। তাইলেও অন্তত প্রকৃতি থেকে এই সব ভেষজ, জরুরি গাছের উধাও হয়ে যাওয়া খানিকটা ঠেকানো যাবে।