ছাদেই হোক না সরিষার ফুল

আদিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে হলুদের সমারোহ। কিংবা বলা যায় অনন্ত চরাচর ভেসে যাচ্ছে এক মায়াবী হলুদে। এমন ছবিতে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা গণমাধ্যম ভরপুর।

শীত এলেই এমনটা হয়। সরিষা ফুলের হলদে ফুল মন কেড়ে নেয় সবার। কিন্তু শহুরে মানুষদের সুযোগ নেই এমন দৃশ্যকল্পের সামনে হাজির থাকার। তাই তাদের সময় সুযোগ বুঝে যেতে হয় গ্রামের পথে। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো চাইলে আপনি এক চিলতে ছাদেও সরিষা বুনতে পারেন। তাতে চরাচর ভেসে যাওয়া হলুদের ছোয়া না পেলেও কাছাকাছি সৌন্দযে মন ভরাতে পারবেন।পাশাপাশি ফুল ফোটার আগে শর্ষে শাকও খেতে পারবেন।

মাঠে কৃষকদের বোনা শর্ষে ক্ষেত্রের মতো অত লম্বা কিংবা ঠাস বুনটের সরিষার দেখা না পেলেও ছাদ কৃষিতে অল্প যত্নেই পাবেন মনের খোরাক। সেজন্য আপনাকে ছাদে মোটামুটি একটা জায়গা করে নিতে হবে। প্লাস্টিকের ছড়ানো কনটেইনার কিংবা শোলার বক্স বানিয়ে তাতে কিছু গোবর মেশান। এরপর সেগুলোতে কিছু শর্ষে দানা ছড়িয়ে দিন।ছাদে বীজ থেকে গাছ বেরোনোর পর যাতে কোন পাখি সেগুলোকে খেয়ে না ফেলে সেজন্য নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একটু বড় হয়ে গেলে পাখিদের খেয়ে ফেলার বিপদ কমে যাবে। তখন ফুল আসার আগে গাছগুলোকে ঘনপাতল করে দেয়ার সুবাদে আপনি কয়েক দফায় শর্ষে শাকও খেতে পারবেন। সরিষা শাক বাংলাদেশে জনপ্রিয়।

সরিষা একটি তৈলফসল।বাংলাদেশে প্রায় সব জেলাতেই সরিষার চাষ হয়। সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে সরিষার তেলের উৎপাদনের বার্ষিক পরিমাণ প্রায় আড়াই লক্ষ টন। সরিষার খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। এই খৈল আবার ছাদ কৃষিতে সারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ হয়। এগুলো হলো মাঘী সরিষা, রাই সরিষা ও ধলি সরিষা।। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল প্রজাতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ছাদকৃষির সরিষা যেহেতু বাণিজ্যিক লাভালাভের জন্য নয়, তাই এসব তথ্যের বিস্তারিত দরকার নেই।

সরিষার ফুল এসে গেলে অবশ্য আর শাক না খেয়ে বরং এর সৌন্দয উপভোগই শ্রেয়তর। তারপর প্রকৃতির নিয়মেই একসময় ফুলগুলো থেকে বেরিয়ে আসবে বীজদানার আধার। তখন আবার সেগুলো সংরক্ষণ করে ঘরোয়া রান্নার জন্য রেখে বাকি কিছু পরের বছরের জন্য বীজ হিসেবে রেখে দিবেন। মাঠে লাগানো সরিষার গাছ দৈর্ঘ্যে এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।অঞ্চল ভেদে মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাস পর্যন্ত এর বপনকাল। তবে ছাদে শীতার্ত আবহাওয়ার দেখা পেলেই বুনে দিতে পারেন। মাঝে এক দুবার গাছের গোড়ার আগাছাগুলো বেছে দিতে হয়। এছাড়াও সময়ে সময়ে প্রয়োজন বুঝে কিছু পানি ছিটিয়ে দেয়া লাগে।

পুরো প্রক্রিয়াটাকে অর্গানিক রাখতে পারলে ভাল। তাতে শাক খেয়ে ভিন্নরকম স্বাদ মেলে। আর কোন কীটনাশক ব্যবহার না করলে ছাদে ফুলের মধু খেতে আসা মৌমাছিদেরও দেখা পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *